ভূঞাপুরে কৃষি প্রণোদনার সফল বাস্তবায়ন।

লেখক: www.nirapodtv.com www.nirapodtv.com
প্রকাশ: ২ ঘন্টা আগে

 

হাবিবুর রহমান সম্রাট তালুকদার উপজেলা প্রতিনিধি

উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মোখলেছুর রহমানের সততা ও নিষ্ঠায় সন্তুষ্ট কৃষক সমাজ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মোখলেছুর রহমানের নেতৃত্বে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের রবি মৌসুমে গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, শীতকালীন পেঁয়াজ, চিনাবাদাম, মসুর ও খেসারি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সর্বমোট ৬৬৭০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়।

উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নে ৯৯৫ জন, গাবসারা ৮৫৫ জন, ফলদা ১৪১০ জন, গোবিন্দাসী ৭৭০ জন, অলোয়া ১০৭০ জন, নিকরাইল ৭২৫ জন এবং পৌরসভায় ৮৪৫ জন কৃষক এ প্রণোদনা পান।

এছাড়াও গত অর্থ বছরে মাসকলাই ২০০ জন, তিল ১০০০ জন, পাট ৩৫০ জন, রোপা আমন ১৩৫০ জন, শাকসবজি ৮০ জন ও বোরো হাইব্রিড ধানের ১৬০০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শতভাগ প্রকৃত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকই বীজ ও সার পেয়েছেন। কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন এবং উৎপাদন বাড়ছে।

কৃষকের অভিজ্ঞতা:
অলোয়া ইউনিয়নের চর অলোয়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমি গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কৃষি প্রণোদনার আওতায় সরিষার বীজ ও সার পেয়েছি। জমিতে চাষ করে এবার প্রচুর ফলন হয়েছে। এ ধরনের সহযোগিতা আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।”

গোবিন্দাসী ইউনিয়নের বাগবাড়ী গ্রামের কৃষক মোঃ কুদ্দুস বলেন, “প্রণোদনা হিসেবে ভুট্টার বীজ ও সার পেয়েছি। নিজের জমিতে চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি। এ উদ্যোগ আমাদের কৃষকদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে দারুণ ভূমিকা রাখছে।”

ফলদা ইউনিয়নের পাছতেরিল্যা গ্রামের কৃষক আঃ আলিম বলেন, “আমি গমের বীজ ও সার পেয়েছি। চাষ করে ভালো ফসল পেয়েছি। এ ধরনের উদ্যোগ কৃষকের উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।”

একই ইউনিয়নের গাড়াবাড়ি গ্রামের কৃষক আঃ হামিদ সহ অনেকেই বলেন, “আমরাও গম বীজ ও সার পেয়েছি। ফসলের ফলন ভালো হয়েছে। আমাদের মতো ক্ষুদ্র কৃষকরা বিনামূল্যে বীজ-সার পেলে কৃষিকাজে উৎসাহ পাই।”

আরও অনেক কৃষকেরা জানান, বিনামূল্যে বীজ ও সার তাদের কাছে সরাসরি পৌঁছেছে এবং তারা কৃষি অফিসের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট। ভবিষ্যতেও এধরণের কৃষি প্রণোদনা চান তারা।

বিতর্ক ও বাস্তবতা
সম্প্রতি কিছু পত্রিকায় এ প্রণোদনা কার্যক্রম নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যেখানে উল্লেখ্য করা হয় সাবেক এমপি ছোট মনিরের যোগসাজশে বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতি করছেন উপজেলা কৃষি অফিস।

তবে উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী গত ‘৫ আগস্ট ২৪ইং’ ‘জুলাই আন্দোলন’ এ সরকার পতনের পর থেকেই সাবেক এমপি ছোট মনির পলাতক রয়েছেন। আর ২ মাস পর ‘নভেম্বর ২৪ইং’ মাসে কৃষি প্রণোদনা বিতরণ শুরু করে কৃষি অফিস। তখন এমপি ছোট মনিরের কোন প্রভাব না থাকায় তার যোগসাজশের তথ্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এতে শতভাগ প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকেরাই প্রণোদনা পেয়েছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসের নামে ভুয়া তথ্য সরবরাহের ঘটনা স্বীকার করে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাসানুর রহমান খান বলেন, ওই সময়ে পারিবারিক সমস্যা ও আমার কাজের ব্লক পরিবর্তন করায় ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকেই বিভিন্ন জায়গায় কৃষি অফিসের নামে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সরবরাহ করেছিলাম।

তিনি ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে আরো বলেন,
“আমার দেওয়া তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এতে আমি লজ্জিত ও দুঃখিত। উপজেলা কৃষি অফিসার ও সহকর্মীরা সৎ ও নিষ্ঠাবান। সকলের নিকট আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”

অন্যদিকে উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা নাজমুল হাছান মামুন বলেন, “প্রণোদনা কার্যক্রম শতভাগ সঠিকভাবে বিতরণ হয়েছে। ৬৬৭০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরাই সুবিধা পেয়েছেন।”

ফলদা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিজয় কৃষ্ণ ভৌমিক বলেন, “রবি মৌসুমে প্রণোদনা কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি।”

মাইজবাড়ি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রুবেল মিয়া জানান, “শতভাগ কৃষকের মাঝে প্রণোদনা বিতরণ করা হয়েছে। এতে ক্ষুদ্র কৃষকরাই শতভাগ উপকৃত হয়েছেন।”

নিকরাইল ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরহাদ হোসাইনও একই কথা উল্লেখ করে বলেন, “প্রণোদনা বাস্তবায়নে কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি। যারা ওই সকল মিথ্যা তথ্য গুলো দিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কৃষি অফিসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছেন তাদের প্রতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

উপজেলা কৃষি অফিসারের বক্তব্য:
উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মোখলেছুর রহমান বলেন, “২০২৪-২৫ অর্থ বছরে রবি মৌসুমে প্রণোদনা কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। এছাড়া কৃষক প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস ও প্রদর্শনী কার্যক্রম শতভাগ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমার কর্মকালীন সময়ে শুধু ৩টি কম্বাইন হারভেস্টার বিতরণ করা হয়েছে, যা কৃষকেরা ব্যবহার শেষে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করছেন। তবে কিছু পত্রিকায় কম্বাইন হারভেস্টার ১০টি, ট্রাক্টর ২০টি, সিডার ২০টি, ধান মাড়াই মেশিন ১০টি ও ভূট্টা মাড়াই মেশিন ১০টি বিতরণের কথা উল্লেখ্য করলেও বাস্তবিক অর্থে আমার কর্মকালীন সময়ে তা বিতরণ হয়নি। ”

তিনি আরও বলেন, “কিছু কুচক্রী মহলের সহযোগিতায় ভুয়া তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে আমি উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে যড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। আমি সবসময় সততার সাথে কাজ করেছি এবং করে যাচ্ছি, উপজেলার কৃষকেরাই তার প্রমাণ।”